মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ ::
চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ৫০টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ও মাঠ প্রশাসন এবং কৃষি অধিদপ্তরের প্রচেষ্টায় জেলার সবচেয়ে বড় এই অর্থনৈতিক খাতের সাফল্যে পুরো জেলাজুড়ে কৃষকের মুখে ফসলের হাসি। আর এই ফসল উৎপাদনের অর্থের আয়ের উপরই নির্ভর করে হাওরাঞ্চলের পরিবারগুলোর মৌলিক চাহিদার বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিয়ে-শাদিসহ সামাজিক সকল কাজকর্ম।
এদিকে, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির পাশাপাশি খোলা বাজারেও ন্যায্য দাম পাওয়ায় বেশ স্বস্তিতে রয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। এরই মাঝে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা কড়া নাড়ছে দরজায়। এই ধান ঘরে তোলার আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার বাজারেও। বোরো ধানের এই বাম্পার ফলনে কৃষকদের ঈদের কেনাকাটায় বাড়তি আমেজ লক্ষ করা গেছে। ঈদুল ফিতরের তুলনায় যদিও বেচাকেনা কম, তবুও শহরের তুলনায় উপজেলার বিপণি বিতানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে ক্রেতাদের।
জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক, দিরাইসহ প্রতিটি উপজেলার বড় বড় বাজারগুলোতে চলছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে চলছে কেনাকাটা।
তবে ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহায় কাপড়ের বেচাকেনা একটু কম বলে ব্যবসায়ীরা জানালেও ইলেকট্রনিকস পণ্যের বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।
এছাড়া কোরবানির পশুর হাটেও শুরু হয়েছে জমজমাট কেনা-বেচা। শহরের স্যামসাং, ভিভো, শাওমি ও অপ্পো মোবাইল শোরুমের একাধিক ম্যানেজারের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা যদিও জেলা শহরে ব্যবসা করে থাকি। তবে জেলার অর্থনৈতিক চাকা সচল থাকে হাওরের কৃষকের বৈশাখের ধান সংগ্রহের উপর। কৃষক যদি বৈশাখ মাসে ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদের ব্যবসা ভালো হবে। এবছর বৈশাখী ভালো হয়েছে। যার ফলে আগের চেয়ে আমাদের বেচাকেনা বেড়ে গেছে।
প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলা থেকে ফোন কিনতে আসেন ক্রেতাগণ।
শহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, কোরবানি ঈদে বিক্রি কমই হয়। তবে বৈশাখী ভালো হওয়ায় এই ঈদে বেচাকেনা কম হলেও সামনে সারা বছরই ঈদ, পূজা-পার্বণ ও বিয়ে শাদীতে আশা করছি ব্যবসা ভালো হবে।
জামালগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাচনা বাজারের লিপি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মো. আক্কাছ আলী বলেন, ঈদুল ফিতরের তুলনায় কাপড় ও জুতা বিক্রি হচ্ছে কম।
মহসিন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. মহসিন কবির বলেন, রোজার ঈদে মূলত কাপড় ও জুতাটা বেশি বিক্রি হয়। এই ঈদে গরু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক কৃষক কোরবানির গরু ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
জগন্নাথপুর উপজেলার মোহনা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী রনি জানান, ঈদকেন্দ্রিক বাজার অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। তবে এই বছর একেবারেই খারাপ যাচ্ছে। আমাদের উপজেলায় বেশিরভাগ হচ্ছে রেমিট্যান্স নির্ভর পরিবার। তাই আমাদের এখানে সবসময় সমানভাবেই যায়।
দিরাই উপজেলার সেন মার্কেটের ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডের ম্যানেজার সনজিত রায় বলেন, আমাদের ব্যবসা কৃষকদের বৈশাখী ফসল ঘরে তোলার উপর নির্ভর করে। এবছর বৈশাখী বেশ ভালো হয়েছে। তাই কম বেচাকেনা হলেও কৃষকের মনে আনন্দ উল্লাস লক্ষ করা যাচ্ছে।
হালির হাওর পাড়ের বাসিন্দা মো. সাত্তার বাদশা বলেন, হাওরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছি। ঈদে কোরবানি দিবো। এভাবেই সাত্তার বাদশার মতো হাজার হাজার কৃষকের ঘরে ঈদে বাড়তি খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
সাচনাবাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ আল আজাদ বলেন, বেচাকেনা যা-ই হোক, বৈশাখী ভালো হওয়ায় কৃষকদের মনে একটি আনন্দের আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
ধানের হাসি মুখে, ঈদ এসেছে সুখে
- আপলোড সময় : ০৫-০৬-২০২৫ ০১:০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৬-২০২৫ ০৯:১০:০২ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ